বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তে গোলাবর্ষণ এবং মর্টারশেল নিক্ষেপ অব্যাহত আছে। হতাহতের ঘটনায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ‘নো ম্যান্স ল্যান্ডে’ থাকা রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে। অনেকেই সেখান থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে শুক্রবার রাতেই ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উখিয়া কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয় এসএসসি-সমমানের পরীক্ষাকেন্দ্র।
স্থানান্তরকৃত নতুন কেন্দ্রে গতকাল ৪৯৯ জন পরীক্ষা দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ বন্ধ নেই। ফলে তাদের কৃষিকাজ বন্ধ রয়েছে। সীমান্তে মাইন আতঙ্কেও ভুগছেন চাষিরা। স্থানীয় বাসিন্দা হাসিনা আক্তার বলেন, মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল তাদের বাড়ির উঠানে পড়েছে। ফলে বাড়ি ছেড়ে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভেজ তীবরীজি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নো ম্যান্স ল্যান্ডে’ তিনটির মতো গোলা এসে পড়ে। একটি বিস্ফোরিত হয়। এতে হতাহতদের সবাই রোহিঙ্গা। ঘটনার পর ‘নো ম্যান্স ল্যান্ডে’ থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে যারা আছেন, তাদের অনেকেই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে নতুন করে কেউ যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে।
তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে ‘নো ম্যান্স ল্যান্ডে’ ৫ বছর ধরে আশ্রয় ক্যাম্প গড়ে তুলে বসবাস করছেন ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পেছনেই মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড়। এর আগে গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমার থেকে ছোড়া ২টি মর্টারশেল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের উত্তরপাড়া মসজিদসংলগ্ন এলাকায় পড়ে। পরদিন সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল সেটি নিস্ক্রিয় করে। তার ঠিক ২দিন পর বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে গোলা এসে পড়ে।
পরীক্ষার্থীদের জন্য পুলিশের গাড়ি উখিয়া থানাপুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য ৩টি বাস দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় ঘুমধুম কেন্দ্র সরিয়ে কুতুপালং কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েন অনেক পরীক্ষার্থী। উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, বরাদ্দকৃত বাস ৩টি যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন হবে, ততক্ষণ স্ট্যান্ডবাই থাকবে।
পরীক্ষা দিতে আসা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালাম বলেন, পরীক্ষা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম, আমাদের এলাকার অবস্থা ভালো না। সকালেও কেন্দ্রে আসার সময় গুলির শব্দ শুনেছি।