#বৌদ্ধ_চিন্তা_ধর্ম_না_দর্শন
* গৌতম বুদ্ধের বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সেই মতবাদই ‘বৌদ্ধ দর্শন’ যা ক্রমে ধর্ম (Religion)-এ পরিণত হয়েছে। * বৌদ্ধ দর্শন বা বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে যতো গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে, তা আর কোনো ধর্মের উপর লেখা হয় নি। বৌদ্ধ দর্শন বা বৌদ্ধ ধর্মের ‘ত্রিপিটক’ মানে তিন ঝুড়ি বই। * সত্যিকার অর্থে গৌতম বুদ্ধ কোন ধর্ম প্রচারক ছিলেন না। তিনি ছিলেন নীতিতত্বের সংস্কারক ও প্রচারক। * তিনি ধর্ম ব্যবসায়ীর মতো ঈশ্বর, আত্মা, পরকাল, নরক ইত্যাদি নিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো দূরে থাক, আলোচনা পর্যন্ত করেন নি। * মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের উপায় খুঁজে বের করাই তাঁর উদ্দেশ্য। তিনি মনে করতেন ১) দুঃখ আছে, ২) দুঃখের কারণ আছে, ৩) দুঃখের সমাপ্তি আছে এবং ৪) দুঃখ দূর করার উপায়ও আছে। * গৌতম বুদ্ধ গতানুগতিক ধর্ম বিশ্বাস করতেন না, তাই বেদপন্থীরা তাঁকে ‘চরমপন্থী নাস্তিক’ আখ্যা দিয়েছিলেন। * ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের সমস্যাই তাঁর সমস্যা, অতীন্দ্রিয় জগতের সমস্যাকে তিনি আদৌ কোনো গুরুত্ব দেননি। * বুদ্ধের মতে অজ্ঞানতাই মানুষের দুঃখের মূল কারণ, জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। * তিনি অতিরিক্ত ভোগবিলাস ও অতিরিক্ত কামনা বাসনা এবং অতিরিক্ত আত্ম নিগ্রহ ও নিরানন্দ পরিহার করতে বলেছেন। * বুদ্ধের মতে ‘কার্যকারণ’ নিয়ম জগতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে চলছে। ঈশ্বর বা কোনো অতীন্দ্রিয় চেতনা সত্তার দ্বারা এই নিয়ম পরিচালিত হয় না। * তাঁর মতে আত্মা বলে কোনো চিরন্তন সত্তা নেই, আত্মা হলো চেতনার অবিচ্ছিন্ন ধারা। * নৈতিক অগ্রগতির জন্য ঈশ্বরের সাহায্যের কোনো প্রয়োজন নেই। অধিকন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস নৈতিকতার পরিপন্থী। * তিনি কর্ম-নিয়মকে সবকিছুর উর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। * তিনি মনে করেন যে, খেয়াল বশত ঈশ্বর এই জগৎ সৃষ্টি করতে পারেন না। কারণ এই জগতে নিয়মশৃঙ্খলা বিদ্যমান। * বর্তমান বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মধ্যে আজ আর বুদ্ধ নেই, বুদ্ধের শিক্ষা নেই, বুদ্ধের আদর্শ নেই। তারাও অন্যদের মতো প্রতারণা ফাঁদ পেতে বুদ্ধকে নির্বাসিত করে ‘বৌদ্ধ দর্শন’কে ‘বৌদ্ধ ধর্ম’ বানিয়ে ব্যবসার লগ্নি করে তুলেছে। * আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ মানুষের সমস্যা নিয়ে যে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন, কোনো ধর্ম সম্প্রদায়ের পক্ষে তার ছিটেফোঁটাও কল্পনা করা সম্ভব হয়নি। কারণ গৌতম বুদ্ধ ছিলেন সত্যবাদী ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানের ধারক বাহক সাধক এবং প্রচারক।
সূত্রঃ ১) ভারতীয় দর্শন — অধ্যাপক অর্জুন বিকাশ চৌধুরী। ২) ভারত ইতিহাস পরিক্রমা — অধ্যাপক প্রভাতাংশু মাইতি।